আমি চলে গেলাম, কেউ আর সত্যের প্রতিবাদ করবে না'

আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে পরপারে ভালো থাকতে পারি। সবার মতো আমি ও সুন্দর একটা জীবন নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু এই সমাজ আমাকে বেঁচে থাকতে দিল না।

সেপ্টেম্বর 16, 2022 - 16:07
 0  54592
আমি চলে গেলাম, কেউ আর সত্যের প্রতিবাদ করবে না'
আমি চলে গেলাম, কেউ আর সত্যের প্রতিবাদ করবে না'

মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করেনা। বাবা মা স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে কখনো কোন পরপুরুষের সাথেও কথা বলি নাই, নিজের চরিত্রকে খারাপ করি নাই। কিন্তু আজ আমি চুরি না করেও চোর সবার মুখে মুখে।”

মৃত্যুর আগে শশুর বাড়ির লোকজনের অনেক যন্ত্রণা আর অপবাদ লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে নিজের হাতে ডায়েরির পাতায় এমন কষ্টের কথাগুলো লিখে গেছেন গৃহবধু রত্না। রোববার রাতে ভোলার লালমোহনের চরভূতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব চৌকিদার বাড়িতে মোবাইল ও স্বর্ণের চেইন চুরির অপবাদ সইতে না পেরে জান্নাতুল ফেরদৌস রত্না (২৫) নামের গৃহবধু বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। গৃহবধূ রত্না ওই বাড়ির মো. লিটনের স্ত্রী। তিনি দুই সন্তানের জননী।

রত্নার বাবা লালমোহন বাজারের ব্যবসায়ী এবং পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা আবুল কাশেম জানান, তার মেয়ে স্বামী বাড়িতে সুখেই ছিল। জামাই লিটন তার আপন ভাগ্নে হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে রত্নার চাচা শশুর স্থানীয় নাম মো. হাফিজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে ভারত থেকে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসে। ভারতে তিনি বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে সন্তোষ দে নামে বসবাস করেন। তিনি নিজেদের সাথে থাকা স্বর্ণালংকার রতœার কাছে জমা রাখেন। ওই ঘর থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল ফোন চুরি হয়। এই চুরির অপবাদ চাচা শশুর রত্নার উপর দেন।

রত্নার বাবা আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে চুরির অপবাদ দিয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত মানসিকভাবে অত্যাচার করে তার চাচা শ^শুর ও বাড়ির অন্যান্য স্বজনরা। অপমান, লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে রত্নার ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে।

মৃত্যুর আগে রত্না তার কষ্টের কথাগুলো লিখে গেছেন ডায়েরির নোটে। রত্না লিখেন, “বাবা আমার অনুরোধ আমার স্বামীকে বাদে বাকি কেউরে ছাড় দিবানা, ওরা সবাই মিথ্যেবাদি। আমার চাচা শশুর ওরা সবাই নাটের গুরু। ওরা সবাই আমার নামে মিথ্যে অপবাধ রটাইছে। আমি কতটা বিশ্বাসী আর সৎ ছিলাম সেটা আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটা মানুষের জীবন ছাড়া প্রিয় আর কি হতে পারে!! আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বলসি আমি চুরি করি নাই। এখন তোরা খুশী, সবাই খুশীই থাক। আমি চলে গেলাম কেউ আর তোদের সাথে সত্যের প্রতিবাদ করবেনা। আর বেশি কিছু লিখলাম না। অনেক কথা বলার ছিলো সমাজকে, এই সমাজে ভালো মানুষের মুল্য নাই। সবার কাছে একটা অনুরোধ রইল আমার মেয়ে দুজনকে দেখিয়েন। ওদের জন্য আমার কতটা কষ্ট হয় বলে বুঝাতে পারবো না। মা ছাড়া কতটা অবহেলিত সন্তান সেটা যার মা নাই সে বুঝে - বাবা মা পারলে ওদের খেয়াল নিও, না পারলে জোর নাই।”

এভাবে ডায়েরির ১৩টি পাতায় আরো অনেক লেখা লিখে গেছেন রত্না। স্বামীর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, দুই মেয়ের উদ্দেশ্যে লিখেছেন। নিজের দাফন কোথায় করবে সেটাও লিখেছেন। ডায়েরিটি রত্নার স্বামী লিটনই ঘর থেকে উদ্ধার করেন। তবে ডায়েরিতে ৮টি পাতা ছেড়া পাওয়া গেছে।

স্বামী লিটনও তার স্ত্রীকে যারা অপবাদ দিয়ে মেরেছে সেই চাচাদের বিচার চান। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার চাচারা অনেক গালিগালাজ করেছে। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রত্নার লাশ ময়না তদন্ত করে আনা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

admin সংবাদ ৭ বিডি ডট কম হল একটি অনলাইন নিউজপেপার ওয়েবসাইট।যা সবসময় সদা সত্য খবর প্রকাশ করে থাকে।আপনার আশে পাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো অপরাধমূলক বিষয় আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে,ঐ সকল বিষয় আমাদেরকে ইমেইল করুন।যেকোনো সময় সঠিক খবর পেতে চোখ রাখুন সংবাদ ৭১ বিডি ডট কম এর ওয়েবসাইটে।